ফ্ল্যাট কেনার পূর্ণাঙ্গ গাইড (২০২৫): ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয়  বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নিন। 

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয়

২০২৫ সালে ঢাকায় নিজের একটা ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন? নিঃসন্দেহে এটা আপনার জীবনের একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা হবে, এই অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম!

তবে এটাও ঠিক যে, ফ্ল্যাট কেনার পুরো রাস্তাটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। মানে, প্রক্রিয়াটা যতটা সরল মনে হয়, বাস্তবে একটু বেশি জটিল আর সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়, আর ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে না জানলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। 

এই যেমন ধরুন :

  • আগে কোনটা করব? কীভাবে শুরু করব?
  • মোটামুটি কত টাকা লাগতে পারে?
  • কোন জায়গায় কিনলে ভালো হয়?
  • যারা ফ্ল্যাট বানাচ্ছে (ডেভেলপার), তারা কি ভালো হবে ? নাকি ঠকে যাব ?
  • আর কাগজপত্রের এত ঝামেলা – কোনটা ঠিক কাগজ, আর কোনটা ভুয়া, বুঝব কী করে?

এই সব চিন্তা তো আসবেই, ঠিক কিনা?

ভুল তথ্যের কারণে বা তাড়াহুড়ো করে অনেকে ভুল করে ফেলেন। আমি চাই না আপনার তেমনটা হোক। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সঠিক তথ্য আর একটুখানি সতর্কতা আপনাকে অনেক বড় ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে। তাই, আজ আমি সহজ ভাষায় কিছু জরুরি বিষয় তুলে ধরছি। যা  শুধু আপনার ফ্ল্যাট কেনার প্রক্রিয়া সহজ করবে না, বরং আপনাকে একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে।চলুন, তাহলে শুরু করা যাক!

আপনার বাজেট কত? খরচের নিখুঁত হিসাব করে নিন 

ফ্ল্যাট কেনার মোট খরচ শুধু এর দামের উপরই নির্ভর করে না। তাই বাজেট করার সময় সব দিক খেয়াল রাখা জরুরি।

  • ফ্ল্যাটের দাম, বুকিং মানি এবং ডাউনপেমেন্ট:
    • মোট দাম : সবার আগে ফ্ল্যাটটির সর্বমোট দাম কত, সেটা নিশ্চিতভাবে জেনে নিন। এই দামের মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত (যেমন, পার্কিং, ইউটিলিটি সংযোগ খরচ ইত্যাদি) আর কী কী নয়, সেটাও বিস্তারিত আলোচনা করে নেবেন।
    • বুকিং মানি: ফ্ল্যাটটি প্রাথমিকভাবে আপনার নামে নিশ্চিত করার জন্য যে টাকাটা জমা দিতে হয়, সেটাই বুকিং মানি। সাধারণত এটি মোট দামের তুলনায় ছোট একটি অঙ্ক হয়ে থাকে।
    • ডাউনপেমেন্ট বা এককালীন প্রাথমিক পরিশোধ: বুকিং মানি দেওয়ার কিছুদিন পরেই আপনাকে ফ্ল্যাটের মোট দামের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এককালীন পরিশোধ করতে হতে পারে। এই বড় অঙ্কের টাকাটাকেই সাধারণত ‘ডাউনপেমেন্ট’ বলা হয়। এই টাকাটা দেওয়ার পরই সাধারণত কিস্তির প্রক্রিয়া (যদি থাকে) বা ব্যাংক লোনের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কেন এটা জরুরি?

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এই প্রাথমিক খরচগুলোই (বুকিং মানি ও ডাউনপেমেন্ট) আপনার বাজেটের একটা বড় অংশ। তাই শুরুতেই মোট দাম, বুকিংয়ের জন্য কত দিতে হচ্ছে এবং তারপর এককালীন কত টাকা (ডাউনপেমেন্ট) জমা দিতে হবে, সেই বিষয়ে পুরোপুরি পরিষ্কার ধারণা না থাকলে পরবর্তীতে আর্থিক পরিকল্পনা করতে অসুবিধা হতে পারে বা অনাকাঙ্ক্ষিত চাপে পড়তে পারেন। তাই বিক্রেতা বা ডেভেলপারের সাথে এই বিষয়গুলো লিখিতভাবে চূড়ান্ত করে নেওয়া উচিত।

  • রেজিস্ট্রেশন ও ট্যাক্স সংক্রান্ত খরচ:

ফ্ল্যাটের যা দাম, তার একটা বেশ বড় অংশই এই রেজিস্ট্রেশন আর সরকারি ট্যাক্স দিতে খরচ   হয়ে যায়। এটা ফ্ল্যাটের দামের প্রায় ৮ থেকে ১৫ ভাগ বা তারও বেশি হতে পারে।

  • রেজিস্ট্রেশন ফি: ফ্ল্যাটের যে সরকারি দাম (দলিলের দাম বা ডিড ভ্যালু), সেটার উপর একটা নির্দিষ্ট টাকা।
  • স্ট্যাম্প ডিউটি: এটাও দলিলের দামের উপর ভিত্তি করে দিতে হয়।
  • স্থানীয় সরকার ট্যাক্স: সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় থাকলে এই ট্যাক্সটা দিতে হয়।
  • মূলধনী লাভ ট্যাক্স (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স): এই ট্যাক্সটা সাধারণত বিক্রেতার দেওয়ার কথা, কিন্তু অনেক সময় বিক্রেতা চালাকি করে ক্রেতার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। তাই কাগজপত্রে কী লেখা আছে, ভালো করে দেখে নেবেন।
  • ভ্যাট (VAT): ফ্ল্যাট কত বড় আর কোন এলাকায়, তার উপর ভ্যাটের পরিমাণ নির্ভর করে। ডেভেলপার কোম্পানি ভ্যাটের কাগজ (চালান) দেবে কিনা, সেটা জেনে নেবেন।
  • আয়কর (AIT): এলাকা আর ফ্ল্যাটের দামের উপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হয়।

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে একটা খুব জরুরি কাজ হলো এই রেজিস্ট্রেশন আর ট্যাক্সের খরচের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখা। দরকার হলে, একজন ভালো দলিল লেখকের সাথে কথা বলে আগেই জেনে নিন মোট কত টাকা লাগতে পারে।

  • অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ:
    • নতুন ফ্ল্যাটে উঠার পর ফার্নিচার কেনা, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, ইউটিলিটি (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি) সংযোগ নেওয়া, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি বাবদ অতিরিক্ত খরচের জন্যেও একটি বাজেট বরাদ্দ রাখুন।
  • লোনের সামর্থ্য যাচাই:
    • যদি লোন নিতে চান, তবে আপনার আয় অনুযায়ী ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দিতে পারে এবং মাসিক কিস্তি (EMI) কত আসবে, তা আগে থেকেই জেনে নিন। আপনার পরিশোধ ক্ষমতার বাইরে যেন না যায়।

ফ্ল্যাটের লোকেশন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?  বিস্তারিত জানুন

কোন এলাকায় ফ্ল্যাট কিনছেন, তার ওপর কিন্তু আপনার প্রতিদিনের চলাফেরা ,সুযোগ-সুবিধার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। তাই জায়গা নির্বাচনে সময় দিন।

  • যাতায়াত ব্যবস্থা ও দূরত্ব:
    • আপনার কর্মস্থল, সন্তানদের স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি জরুরি স্থান থেকে এলাকার দূরত্ব এবং সেখানে যাতায়াতের সুবিধা (যেমন – রাস্তার অবস্থা, পাবলিক পরিবহন, যানজট) কেমন হবে তা ভালোভাবে দেখে নিন।
  • নিরাপত্তা ও পরিবেশ:
    • এলাকাটি কতটা নিরাপদ? অপরাধের হার কেমন? আশেপাশের পরিবেশ (যেমন – কোলাহল, পরিচ্ছন্নতা) এবং প্রতিবেশীরা কেমন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিন।
  • নাগরিক সুযোগ-সুবিধা:
    • দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য কাছাকাছি বাজার বা সুপার শপ আছে কিনা? ভালো স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, পার্ক বা খেলার মাঠ আছে কিনা? জীবন সহজ করতে এই সুবিধাগুলো জরুরি, তাই ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় কাজ হিসেবে এলাকার এই দিকগুলো  অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।
  • ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা:
    • এলাকাটির আশেপাশে সরকারের কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা (যেমন – নতুন রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল স্টেশন) আছে কিনা? ভবিষ্যতে এলাকাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বা অন্যান্য সুবিধার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা আপনার প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

নতুন ফ্ল্যাট ভালো নাকি পুরোনো? বুঝে সিদ্ধান্ত নিন

নতুন ও পুরোনো – দুই ধরনের ফ্ল্যাটেরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরাটি বেছে নিন।

  • নতুন ফ্ল্যাটের সুবিধা-অসুবিধা:
    • নতুন ফ্ল্যাটে আধুনিক ডিজাইন, উন্নত ফিটিংস পাওয়া যায় এবং সাধারণত মেরামতের ঝামেলা কম থাকে। তবে দাম বেশি হয় এবং অনেক সময় সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
  • পুরোনো ফ্ল্যাটের সুবিধা-অসুবিধা:
    • পুরোনো ফ্ল্যাট তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যেতে পারে এবং যা দেখছেন তাই পাচ্ছেন। কিন্তু এতে কিছু সংস্কার বা মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে এবং বিল্ডিংয়ের কাঠামোগত অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করতে হয়।
  • নির্মাণাধীন (Under Construction) ফ্ল্যাটের সুবিধা-অসুবিধা:
    • নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট কিনলে দাম কিছুটা কম হতে পারে এবং অনেক সময় কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ থাকে। কিন্তু সময়মতো ফ্ল্যাট বুঝে না পাওয়ার বা ডেভেলপারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডেভেলপার কোম্পানি কতটা নির্ভরযোগ্য? যাচাই করুন

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পরিচিতি ও সুনাম যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

  • কোম্পানির নিবন্ধন ও সদস্যপদ:
    • ডেভেলপার কোম্পানিটি কি রিহ্যাব (REHAB – Real Estate & Housing Association of Bangladesh) এর সদস্য? তাদের কি সরকারি অনুমোদন বা নিবন্ধন আছে? এগুলো তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রাথমিক নির্দেশক।
  • অতীতে  কাজের অভিজ্ঞতা ও মান:
    • তাদের আগে তৈরি করা প্রজেক্টগুলো (অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং) নিজে গিয়ে পরিদর্শন করুন। কাজের মান, ব্যবহৃত উপকরণ, ফিনিশিং কেমন তা দেখুন। সম্ভব হলে সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলুন।
  • সময়মতো হস্তান্তরের রেকর্ড:
    • কোম্পানিটি কি আগের প্রজেক্টগুলো ক্রেতাদের নির্ধারিত সময়ে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে? সময়মতো ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করতে পারাটা অনেক ডেভেলপারের সাধারণ সমস্যা, তাই এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
  • গ্রাহক সেবা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি:
    • বিক্রয়ের পর তারা কেমন গ্রাহক সেবা দেয়? ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানে তারা কতটা আন্তরিক? পুরোনো ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা জানতে পারেন।

কাগজপত্রের ঝামেলা এড়াতে যা যা যাচাই করবেন 

জমির মালিকানা ও বিল্ডিংয়ের বৈধতা সংক্রান্ত কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই না করা ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল হতে পারে।

  • জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল:
    • যে জমির উপর ফ্ল্যাটটি তৈরি হচ্ছে, সেই জমির মূল দলিল (টাইটেল ডিড), ভায়া দলিল (মালিকানা পরিবর্তনের ইতিহাস), সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ান এবং ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট) সঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হোন।
  • নামজারি ও খাজনা:
    • জমির নামজারি (Mutation) বিক্রেতা বা ডেভেলপারের নামে সঠিকভাবে করা আছে কিনা এবং জমির খাজনা হালনাগাদ (আপ-টু-ডেট) পরিশোধ করা আছে কিনা, তার রশিদ যাচাই করুন।
  • সরকারি অনুমোদনপত্র:
    • অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং নির্মাণের জন্য রাজউক বা সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা থেকে অনুমোদিত নকশা (Approved Plan) এবং নির্মাণ অনুমোদন পত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। অনুমোদিত নকশার সাথে নির্মিত বিল্ডিংয়ের মিল আছে কিনা দেখুন।
  • বায়না বা বিক্রয় চুক্তিপত্র:
    • ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার সময় বা কেনার সময় যে চুক্তিপত্র (Allotment Agreement/Sale Agreement) করছেন, তার প্রতিটি শর্ত (ফ্ল্যাটের সাইজ, দাম, পেমেন্ট শিডিউল, হস্তান্তরের তারিখ, কমন স্পেসের পরিমাণ ইত্যাদি) ভালোভাবে পড়ে ও বুঝে স্বাক্ষর করুন।
  • আইনি পরামর্শ গ্রহণ:
    • কাগজপত্র সংক্রান্ত কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে বা মনে কোনো সন্দেহ থাকলে একজন অভিজ্ঞ প্রপার্টি আইনজীবীর সাহায্য নিন। সামান্য খরচের জন্য ভবিষ্যতের বড় ঝুঁকি এড়ানো ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় বুদ্ধিমানের কাজ।

ব্যাংক লোন নিয়ে চিন্তা করছেন? সেরা অফারটি বাছুন (হোম লোন গাইড)

অনেকের পক্ষেই একবারে পুরো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে হোম লোন একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

  • বিভিন্ন ব্যাংকের অফার যাচাই :
    • বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের হোম লোনের সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট), প্রসেসিং ফি, লুকানো খরচ (হিডেন চার্জেস), লোন পরিশোধের সর্বোচ্চ মেয়াদ ইত্যাদি বিষয়গুলো যাচাই  করে দেখুন।
  • আপনার যোগ্যতা ও প্রয়োজন মূল্যায়ন:
    • আপনার মাসিক আয়, বয়স, পেশা ইত্যাদি অনুযায়ী আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা লোন পেতে পারেন এবং আপনার প্রয়োজন কত, তা হিসাব করুন। পরিশোধ ক্ষমতার বেশি লোন নেওয়া উচিত নয়।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা:
    • হোম লোনের আবেদনের জন্য সাধারণত আয়ের প্রমাণপত্র (বেতন স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট), জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবির মতো কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। আগে থেকে এগুলো গুছিয়ে রাখলে প্রক্রিয়া সহজ হবে।

ফ্ল্যাট বুঝে নেওয়ার শেষ ধাপ: যা যা অবশ্যই দেখে নেওয়া দরকার

রেজিস্ট্রেশন বা পুরো টাকা পরিশোধের আগে ফ্ল্যাটটি ভালোভাবে দেখে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

  • চুক্তি অনুযায়ী ফিনিশিং ও ফিটিংস:
    • চুক্তিপত্রে উল্লেখিত ব্র্যান্ড এর টাইলস, বাথরুম ফিটিংস, ইলেকট্রিক সুইচ, দরজা, জানালা ইত্যাদি লাগানো হয়েছে কিনা তা মিলিয়ে দেখুন। রঙের কাজ বা ফিনিশিং ঠিকমতো হয়েছে কিনা যাচাই করুন।
  • কাঠামোগত ত্রুটি বা সমস্যা:
    • দেয়ালে বা ছাদে কোনো ফাটল আছে কিনা, মেঝে সমান আছে কিনা, দরজা-জানালা ঠিকমতো লাগছে কিনা, পানির লাইনে বা ইলেকট্রিক লাইনে কোনো সমস্যা আছে কিনা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।
  • প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুবিধা:
    • গ্যারেজ স্পেস, কমন স্পেস, লিফট, জেনারেটর, সিকিউরিটি ব্যবস্থা ইত্যাদি যা যা দেওয়ার কথা ছিল, তা ঠিকঠাক আছে কিনা এবং ব্যবহার উপযোগী কিনা দেখে নিন।
  • ত্রুটি সংশোধন:
    • কোনো সমস্যা বা ত্রুটি চোখে পড়লে তা অবিলম্বে ডেভেলপারকে লিখিতভাবে জানান এবং সেগুলো সম্পূর্ণ ঠিক না করা পর্যন্ত ফ্ল্যাট বুঝে নেওয়া বা চূড়ান্ত পেমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।

শেষ কথা 

দেখলেন তো, ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে করণীয় কাজগুলো কতটা বিস্তারিত হতে পারে! এটা হয়তো একটু সময়সাপেক্ষ আর জটিল মনে হচ্ছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই সতর্কতা আর যাচাই-বাছাই আপনার জীবনের অন্যতম সেরা বিনিয়োগটিকে সুরক্ষিত করবে। হ্যাঁ, একটু সময় লাগবে, একটু দৌড়াদৌড়িও করতে হবে, কিন্তু এর ফলটাও তো অনেক মধুর। 

 ফ্ল্যাট শুধু ইট-সিমেন্টের কাঠামো নয়, এটা আপনার সারাজীবনের স্বপ্ন – নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা!

আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনাকে একজন আত্মবিশ্বাসী ক্রেতা হিসেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আপনার স্বপ্নের ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়ার এই যাত্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ সফল হোক। আপনার আগামীর জন্য অনেক শুভকামনা!

এই গাইডটি আপনার কেমন লাগলো? ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে কি? অথবা আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যদি কোনো টিপস better engineering ltd.(bel) সাথে শেয়ার করতে চান, তাহলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে জানান। আপনার প্রতিটি মতামত আমাদের কাছে মূল্যবান!

join the success

Let’s create something extraordinary together

Schedule a free consultation with our team and let’s make things happen!